আগামী সরকারের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও জনসমর্থন আবশ্যক, এ কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলছেন, যদি ম্যান্ডেট দুর্বল হয়, তাহলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। তাই শক্তিশালী ম্যান্ডেট পেতে হলে জনতার পুরো সমর্থন প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপি আয়োজিত ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত এই সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি লন্ডন থেকে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ভবিষ্যতের রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতি ও আইনকে অগ্ৰাধিকার দিতে হবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বর্তমানে অনেককে অযৌক্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যার ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি, যাতে নতুন বাংলাদেশ গড়া যায়।
তিনি জনগণের কাছে পরিষ্কার করে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সঠিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিহার্য। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ সব সময় জনপ্রিয় সিদ্ধান্তই সঠিক নয়।
এর পাশাপাশি তিনি ট্রাফিক পরিস্থিতি নিয়েও গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, ঢাকা শহরের যানজট কমাতে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ প্রতিদিন এই যানজটে আমাদের সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। এটা দূর করতে পারলেই রাজধানীর জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব।
অতিরিক্ত বলেন, রাজধানীর পানি সরবরাহের সংকট এখনও মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আগের তুলনায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে টেকসই সমাধান খুঁজে বেরাতে হবে।
শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রেও তারেক রহমান পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করলে তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। শুধু শাস্তিই যথেষ্ট নয়, এর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
তিনি নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, ফ্যামিলি কার্ড ও নারী শিক্ষার ওপর জোর দেন। বলেন, যদি জনগণের সমর্থন আসে, তবে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারব। পাশাপাশি, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য কৃষক কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে; এতে অন্তত দেড় কোটি কৃষক উপকৃত হবেন।
জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, শহরের কক্ষের ভিতরে বসে রাজনীতি করলে মানুষের আসল সমস্যা বোঝা যায় না। যানজট, দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থান—এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ডা. জাহেদ উর রহমান, ও ড. মাহদী আমিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশাজীবী নেতা ও বিএনপির অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
