নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে, যা সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। এ সময়, তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাইয়ে জাতীয় পরবর্তী গণভোটের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একের পর এক আলোচনা-সমালোচনার শিকার হয়ে ওঠা বিষয় হলো, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি বা কতখানি ক্ষমতা দিয়ে ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রশ্নটি আমাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ইসি সূত্র মতে, যদি তিনি সংবিধান, ভোটার তালিকা আইনের প্রযোজ্য নিয়ম ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আইন মানেন, তাহলে তার জন্য কোনো বাধা নেই ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার। বিশেষ করে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেকে ভোটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং একই দিন মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিদেশে বসবাস করলেও, প্রবাসে বা দেশে ভোটার হওয়ার জন্য ফরম-২ পূরণ করে আবেদন করতে পারেন। অর্থাৎ, বিদেশে বসে তিনি সম্ভবত ভোটার হয়ে উঠতে পারেন, যদি তিনি ভোটার হিসেবে যোগ্যতা পূরণ করেন। এই বিষয়ে দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
যদি তিনি ইংল্যান্ডে থাকেন এবং বিদেশি নাগরিকত্ব না ত্যাগ করেন, তবে তার জন্য ভোটার হওয়ার কোনও বাধা নেই। আবার, যদি তিনি প্রার্থী হতে চান, তাহলে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা রাখতে হবে, যেমন: বয়স ২৫ বছর বা তার বেশি, বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, সুস্থভাবে জীবনযাপন করা, এবং বিভিন্ন অযোগ্যতা যেমন: আদালতের অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা, বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ বা আইনি কোনো দন্ডপ্রাপ্তি ইত্যাদি না থাকা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার পরও যদি তিনি যোগ্যতাগুলি পূরণ করেন, তবে তিনি ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন, সেই সঙ্গে প্রার্থী হওয়ার জন্যও যোগ্য থাকবেন। সাক্ষর বা স্বাক্ষর দিয়ে ডাকযোগে বা প্রতিনিধি মারফত লন্ডন থেকেই মনোনয়নপত্র দাখিলেরও সম্ভব।
ইসির সচিব আখতার আহমেদ বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আইন অনুযায়ী, যেকোনো নাগরিক যদি যোগ্যতা পূরণ করেন, তিনি ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারবেন। তিনি এও যোগ করেন, তারেক রহমানের জন্য ভোটার হতে কোনও বাধা নেই। যদি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক থাকেন বা প্রকৃতভাবে নিজেকে বাংলাদেশি প্রমাণ করতে পারেন, তবে অন্য এলাকা থেকে ভোটার হওয়াও সম্ভব।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও আলোচনার ঝড় চলছে, বিশেষত তারা বলছেন যে, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন এবং ভোটার হয়ে নিজেকে নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করবেন। তারা মনে করছেন, তার এই ক্ষমতা কোনভাবেই যেন থামানো যাচ্ছে না।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, এর পর ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই, ১১ জানুয়ারি শেষ দিন হিসেবে আপিলের জন্য থাকছে, এবং ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি আপিল নিষ্পত্তি হবে। এরপর ২০ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার ও ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ হবে। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি এবং ভোটের দিন, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০ থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ।
