প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিভিন্ন উদ্যোগে প্লেনের টিকিটের কেলেঙ্কারির ঘটনা থামানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার বিশেষ কায়দায় এয়ার টিকিট বিক্রি করে বিদেশে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করার অভিযোগ উঠেছে সায়মন ওভারসিজ লিমিটেড নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। সূত্রের তথ্যানুসারে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহের বিরুদ্ধে দেশের বাইরেও ১৬ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, সায়মন ওভারসিজ নামের এই ট্রাভেল এজেন্সিটি ঢাকার গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) আইডি ব্যবহার করে বিদেশে এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের জন্য এয়ার টিকিট বিক্রি করে আসছিল। অবৈধভাবে এই টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ দেশের বহির্বিশ্বে পাঠানো হয়, যা বৈধ নয়। এতে করে দেশের রিজার্ভেও কোনও অবদান থাকছে না।
মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, অভিযোগ পাওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এই বিদেশি এয়ার টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থের বিনিময় ও পাচার সংক্রান্ত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহের কাছে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তদন্তের অংশ হিসেবে, গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সফটওয়্যার স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সায়মন ওভারসিজ বাংলাদেশী আইএটিএর ডিডিএস আইডি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোট ১৮৯৪টি এয়ার টিকিট বিক্রি করেছে। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকার বেশি। এই টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে ফিরে আসতে পারেন, তবে টাকাটা বাংলাদেশে ফেরত আসছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জিডিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা অংশগ্রহণ করে টিকিট বিক্রি করেন। এ জন্য তাদের নিজস্ব আইডি থাকতে হয়, যা মূলত বাংলাদেশ থেকেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে, সায়মন ওভারসিজ এই আইডিগুলো বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য অবৈধভাবে ব্যবহার করছে, যার ফলে দেশের রেবের ভিতর অর্থ ও রিজার্ভের কোনও যোগান দিচ্ছে না। এইসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ অর্থের পাচার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতি:৫ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে, আসফিয়া জান্নাত সালেহ মূলত ট্রাভেল খাতের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব ছিলেন। তার অধীনে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। চলতি বছরের আগস্টে, এই সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির অভিযোগে সংগঠনটির প্রশংসনীয় পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে টিকিট কেলেঙ্কারির ব্যাপক অভিযোগ উঠছে।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি।
