এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগ – Daily Bhorer Potrika

এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২৬, ২০২৫

ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই অর্থ তিনি চাঁদাবাজি করে অর্জন করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

সিআইডির দাবি, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আশির দশকের পর পরিবহন সেক্টরে প্রবেশ করেন। প্রথমে পার্টনারশিপে একটি পুরানো বাস কেনার মাধ্যমে তার ব্যবসা শুরু হলেও, দ্রুত তিনি প্রায় ২০টি বাসের মালিক হয়ে উঠেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পরিবহন মালিকদের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান তৈরি করেন। এরপর তার রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রথম বিএনপি, পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগয়ের সহ-সভাপতি হন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেছেন, এই রাজনৈতিক সংযোগ তাকে আরো বেপরোয়া করে তোলে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৫ সালের অগাস্ট পর্যন্ত তিনি ধারাবাহিকভাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি সংগঠনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং পরিবহন সেক্টরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধে পরিবহন চালু রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি সংবাদ ব্লাকমেইল, তবে নিজের কোম্পানির বাসগুলো রাস্তায় নামাননি, যা তার কৌশলের অংশ ছিল।

জসীম উদ্দিন খান বলেন, এই চাঁদাবাজির কার্যক্রম ছিল অত্যন্ত সংগঠিত এবং ভয়ভীতি দিয়ে পরিচালিত। এনায়েত উল্লাহ ও তার সঙ্গীরা সিন্ডিকেট গঠন করে বাস মালিকদের কাছ থেকে প্রকাশ্য ও মাসিক চাঁদা আদায় করতেন। নতুন বাস রুটে নামানোর জন্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হতো। নতুন বাস কেনার সময় সেই বাসের একটি অংশও তার হাতে দিতে হতো, অন্যথায় চালানো কষ্টকর হয়ে উঠত। এর ফলে অনেক কোম্পানি অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার চাপের মধ্যে পড়ে।

সিআইডির মুখপাত্র জানান, ঢাকার প্রতিটি বাস টার্মিনাল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের অন্যান্য বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতিগুলোর মধ্যেও ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। সংস্থাটি বলে, সাব-সেনেট বাহিনী ব্যবহার করে তিনি পরিবহন সেক্টরে terror সৃষ্টি করেছিলেন। বিএফআইইউ, ব্যাংক, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পরিবহন সমিতি ও মিডিয়ার বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত রেকর্ড অনুযায়ী অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ধানমন্ডির ২টি ফ্ল্যাট ও রূপগঞ্জের ২টি প্লটসহ মোট ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। একই সময়ে তাদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ১১০ কোটি টাকা।

এসব অনুসন্ধানে সিআইডির ধারণা, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকার বেশি টাকা জমা ও উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে এনায়েতের কোম্পানি এনা ট্রান্সপোর্টের হিসাবগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে, যেমন – ৯৩০ কোটি টাকার বেশি জমা এবং প্রায় ৯০৬ কোটি টাকা উত্তোলন। একইভাবে অন্য কোম্পানি ও ব্যক্তিগত হিসাবেও কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

সিআইডির অনুসন্ধানে 밝혀 গেছে, ‘স্ট্রাকচারিং’ বা ‘স্মার্ট লেয়ারিং’ কৌশল ব্যবহার করে অবৈধ অর্থের বহু অংশ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। এর ফলে অবৈধ অর্থের দুই পক্ষের মধ্যে মোট ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৭৪ টাকা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে।

নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। খন্দকার এনায়েত উল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।