আইএমএফের খোলাখুলি চিত্র প্রকাশে সন্তোষজনক মন্তব্য – Daily Bhorer Potrika

আইএমএফের খোলাখুলি চিত্র প্রকাশে সন্তোষজনক মন্তব্য

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ৩, ২০২৫

দেশে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তার সম্পূর্ণ তথ্য গোপন রেখেছিলেন। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল এই প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে ব্যাংকের খেলাপি ঋনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করা হয়, যদিও আগামী বছরে এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আশা ব্যক্ত করেছেন কর্মকর্তারা।

আইএমএফের প্রতিনিধি দল ঢাকায় সফরকালে এই সত্যতা স্বীকার করে যে, গোপন খেলাপির প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, তারা বিভিন্ন বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যেমন বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন, পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা। এসব বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

আইএমএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামানো বাধ্যতামূলক। তবে, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই গোপনে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। জুন মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছর আগে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। বর্তমানের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশের বেশি, আর বেসরকারি ব্যাংকেও এই হার ১০ শতাংশের ওপরে।

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল তাৎক্ষণিকভাবে মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, অর্থের সরবরাহ ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশদ আলোচনা করে। তারা মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সতর্ক করে দিয়েছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদি সংকোচনমূলক নীতির কারণে বিনিয়োগে অগ্রগতিতে ব্যাঘাত না ঘটে।

এছাড়া, তারা রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, প্রোভিশন ঘাটতি, পুনঃমূলধন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও গভীর মূল্যায়ন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ঋণের শর্তপূরণে অগ্রগতি জানতে তথ্য নিচ্ছে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা এবং রিজার্ভ ব্যবহারে নজরদারি চালাচ্ছে।’ এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয় সুদৃঢ় হয়ে উঠছে।