চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে দেখাল নতুন অস্ত্রের ঝুঁকি ও উচ্চক্ষমতা – Daily Bhorer Potrika

চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে দেখাল নতুন অস্ত্রের ঝুঁকি ও উচ্চক্ষমতা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫

রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে দেখা গেল কয়েকটি অত্যাধুনিক এবং বিস্ময়কর অস্ত্রের প্রদর্শনী। এতে নতুন ধরনের সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তির উন্মোচন করা হয়, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই কাল্পনিক প্রদর্শনী শুধু দেশের শক্তি দেখানোর জন্য নয়, বরং বিশ্বের ক্রেতাদের কাছে চীনের তৈরি অস্ত্রের বিপণন ও বিক্রির একটি বড় কৌশল বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

প্রদর্শিত অস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ডুবো ড্রোন। অ্যাজেএক্স০০টু নামের এই বিশাল আকারের মানববিহীন ডুবোযান (ইউইউভি) পানির Te২০ মিটার গভীরে যেতে সক্ষম। এই ড্রোনের সাবমেরিনের মতো গঠন, যা সমুদ্রের গভীরে দ্রুত চলাচল করতে পারার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

এছাড়া, কুচকাওয়াজে থাকল এআই-চালিত ড্রোন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে চালিত স্টিলথ অ্যাটাক ড্রোন দেখানো হয়। এই ড্রোন মানবচালিত যুদ্ধবিমানগুলোর পাশাপাশি উড়তে সক্ষম, যেগুলো ব্যাপক সুরক্ষিত এবং উচ্চমানের প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত।

বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রদর্শনীর মধ্যে ছিল ডংফেং-৫ ক্ষেপণাস্ত্র, যা এক ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি মূলত চীনের উত্তরাঞ্চলের সাইলো পরীক্ষামূলক কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।

স্মার্ট রোবট টেকনোলজির দিক থেকে চোখ কপালে দিয়েছিল রোবট উলফ। চার পায়ের এই রোবটটি সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা কার্যক্রম, তথ্য সংগ্রহ এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

সুস্পষ্ট নজরে এসেছে সমরাস্ত্রের মধ্যে একটি বিশেষ জিনিস, যা হলো এইচজেড-১৫৫ সাঁজোয়া ট্রাকের ওপর বসানো এলওয়াই-১ লেজার অস্ত্র। এটি প্রতিপক্ষের বৈদ্যুতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধীকেই দ্রুত ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন বিশেষ জোর দিচ্ছে তার ক্ষেপণাস্ত্র ও ব্যালিস্টিক রকেট শক্তির উন্নয়নে। কারণ, তারা মনে করে এগুলো তাদের প্রতিরক্ষার মূল স্তম্ভ হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আধিপত্যের মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।

প্যাসিফিক ফোরামের ফেলো আলেকজান্ডার নেইল বলছেন, এখনো মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ ও ক্যারিয়ার গঠন শক্তি বেশ मजबूत, তবে পশ্চিমা উন্নত প্রতিরক্ষা মহল এই অস্ত্রের কার্যকারিতা ও ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও যোগ করেন, চীন তার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে এবং দ্বিতীয় আঘাত হানার ক্ষমতা তৈরির জন্য নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্ম বিকাশ করছে।

বিশেষ করে ডংফেং-৬১ ক্ষেপণাস্ত্রটি এই কুচকাওয়াজের অন্যতম বৃহৎ আকর্ষণ ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্র হাইপারসনিক ওয়ারহেডকে আধা কক্ষপথে প্রবেশ করানোর সক্ষমতা রাখে। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি একাধিক স্থানে স্থাপনযোগ্য, দ্রুত মোতায়েন ও লুকানো যায়, যা শত্রুর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। সূত্র: বিবিসি

এই সামরিক প্রদর্শনী বোঝায় যে, চীন তার আধুনিক ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।