দুর্গাপূজা উপলক্ষে আসছে ১৮ দফা নির্দেশনা – Daily Bhorer Potrika

দুর্গাপূজা উপলক্ষে আসছে ১৮ দফা নির্দেশনা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

চলতি মাসের শেষের দিকে বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে। এই উৎসবের অনুষ্ঠানকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে এবং কোনও নাশকতা, সন্ত্রাসী হামলা বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ সভা ডেকেছে, যেখানে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা অনলাইনে অংশ নেবেন। এই সভার মাধ্যমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যসূচি নির্ধারণ করা হবে। একই সঙ্গে দেশের কারাগারগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

সভায় দেশের আট বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ অংশ নেবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনীও এই সভায় যোগ দেবেন, তারা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর বার্তা প্রদান করবেন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক ও সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

বিশেষ করে চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টির কারণে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পর, তারা সতর্ক থাকবেন যাতে পরিস্থিতি শান্ত থাকে। পাশাপাশি পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সময়মতো দেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও সক্রিয় হতে বলা হবে, যাতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা কমে।

এছাড়া, সভার আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত থাকছে সামনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচনকালীন প্রশিক্ষণ। নির্বাচনী ষড়যন্ত্র ও তার মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হবে।

উল্লেখ্য, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই দফাগুলো হলো:

১. দুর্গাপূজা চলাকালীন পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারসহ অন্যান্য বাহিনীর দৃশ্যমান টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো। প্রয়োজন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতা প্রদান।

২. কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনার আশঙ্কা দেখা গেলে দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ ও কার্যকর পদক্ষেপ।

৩. পূজামণ্ডপগুলো পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন নিশ্চিত করা।

৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনও গুজব বা আপত্তিকর বার্তা না ছড়ানোর নির্দেশ।

৫. পূজা কমিটিগুলোর জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও পাহারার ব্যবস্থা করা, স্বেচ্ছাসেবক ও পাহারাদার নিয়োজিত করা।

৬. প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন।

৭. নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত।

৮. সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ছাত্র-জনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে মনিটরিং কমিটি গঠন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই কমিটি নেতৃত্ব দেবে।

৯. পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।

১০. জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর মোবাইল নম্বর মন্দিরে প্রদর্শন ও ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা।

১১. অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বা সন্দেহজনক বস্তু প্রবেশ থেকে রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো। প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে শুরু করে পূজা শেষে বিসর্জন পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত।

১২. প্রতিমা ভাঙচুর রোধে সর্বোচ্চ সুরক্ষা ব্যবস্থা।

১৩. প্রতিমা বিসর্জন ও মণ্ডপে পুলিশ, আনসার মোতায়েন। নারী দর্শনার্থীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ।

১৪. পূজামণ্ডপে মেয়েদের উত্ত্যক্ত কিংবা ইভটিজিং রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।

১৫. পটকা, আতশবাজি পোড়ানো বন্ধসহ আতশবাজির বিক্রয় ও ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ।

১৬. পার্শ্ববর্তী স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন ও প্রয়োজনীয় প্রাচুর্য্য, আলো ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা।

১৭. বিসর্জনের সময় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল স্ট্যান্ডবাই থাকবে।

১৮. যানজট ও খারাপ সড়ক পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাস্তা মেরামত ও পর্যাপ্ত পরিকল্পনা গ্রহণ।

সরকারের এই পদক্ষেপগুলো সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ও সচেতন থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভাবে উদযাপিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।