রাজশাহীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ – Daily Bhorer Potrika

রাজশাহীতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ৯, ২০২৫

রাজশাহীর পুঠিয়ায় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে এক কাঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পাওয়ার জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। আজ সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

এই ব্যবসায়ীর নাম আবদুল হান্নান। তিনি উপজেলার হাতিনাদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন বলে জানিয়েছেন। অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। একই সঙ্গে তিনি বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নন্দনপুর বাজারের চায়ের দোকানে তাঁর ছোট ছেলে তুষার আহমেদ মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিল। এ সময় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ছেলের চোখাচোখি হয়। এতেই রফিকুল ইসলাম কী বুঝে তার ছেলেকে মারধর করেছেন। তিনি ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে ওরা মেরেছে মারুক। এ নিয়ে কিছু করার দরকার নেই।

আবদুল হান্নান আরও বলেন, তাঁর বড় ছেলে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন, ছুটিতে বাড়িতে আছে। ছোট ছেলেকে মারার কিছুক্ষণ পরেই বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম লোকজন সঙ্গে করে এসে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। বুঝতে পেরে তিনি বড় ছেলেকে নিয়ে পাশের একটি বাড়ির চাতালে পালিয়ে থাকেন। রফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে বাড়ির সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন। যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে তাঁর বাড়ির রান্নাঘর, খড়ির ঘর ও একটি ছোট ঘর পুড়ে গেছে। দুটি ছাগল ও একটি গরু পুড়ে গেছে।

খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। আবদুল হান্নান বলেন, ৫ আগস্টের পর রফিক মেম্বার তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। না দিলে মারার হুমকি দিয়েছিলেন, বাড়িঘর ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগের হুমকিও দিয়েছিলেন। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, মেরে ফেলে দিলেও তিনি চাঁদা দেবেন না।

চাঁদা দাবির কারণ জানতে চাইলে আবদুল হান্নান বলেন, রফিকুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতি করেন আর তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে শুধু ভোট দেন। মিটিং–মিছিল কোথাও যান না। কেউ প্রমাণ দিতে পারবেন না। তিনি দলের সক্রিয় কোনো কর্মীও নন, শুধু ভোটার। তাতেই ওরা মনে করে যে তিনি আওয়ামী লীগ করেন। এ জন্যই তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করেন বলে তাঁর ধারণা।

ঘটনার পর সোমবার বিকেলে আবদুল হান্নানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানের একটি ফলের গাছসহ একাংশের বাড়িঘর পুড়ে গেছে। তবে শোবার ঘরগুলো ভাঙচুর করা হলেও সেসব অংশে আগুন লাগেনি। এর আগেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় যুবক ইকবাল হোসেনের ভাষ্য, চায়ের দোকানে আবদুল হান্নানের ছেলে তুষার তাঁর মামাতো ভাইকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন। এটা দেখেই রফিকুল ইসলাম ধারণা করেছেন তাঁকে কটাক্ষ করে হাসাহাসি করা হচ্ছে। এরপর তিনি তুষারকে মারধর করেছেন। তুষার বাড়িতে এসে বলার পর তাঁর বাবা ক্ষোভে রফিকুল ইসলামের উদ্দেশে চিল্লাচিল্লি করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই রফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে হান্নানের বাড়িতে হামলা করেন।

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামের বাড়ি পাশাপাশি। তাঁরা মূলত একই বংশের লোক। তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রধান ফটকে তালা দেওয়া রয়েছে। বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। বাড়ির মাটির দেয়ালে কুড়ালের কয়েকটি কোপ এবং টিনের চালায় একটি কোপ দেখা যায়। লোকজন বলেন, রফিক মেম্বার এগুলো দেখিয়ে তাঁদের কাছে দাবি করেছেন তাঁর বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আবদুল হান্নানের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল হোসেন রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে আবদুল হান্নান বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার করেছেন। সেখানে রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। হামলাকারীরা তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।