চারপাশে স্বজনদের ভিড়। বিলাপ-সান্ত্বনা কোনো কিছুই ছুঁয়ে যাচ্ছে না তামান্না ইসলামকে। তিনি নির্বাক। চোখে পানিও নেই। বাসার একটি কক্ষে খাটে বসে শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে এদিক-ওদিক তাকান, আবার মুঠোফোন খুলে দেখেন ছোট্ট আয়াতের হাসিমুখের ছবি।
গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার ওয়াজ মুন্সিবাড়ি এলাকার একটি বাসায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। তামান্নার একমাত্র সন্তান আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর ছয় টুকরা করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। আয়াতের বাবা সোহেল রানাদের ভাড়াটে আবির মিয়া নামের এক তরুণকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
১৫ নভেম্বর বিকেলে আয়াত বাসার পাশে একটি মক্তবে পড়তে যায়। পরে পরিবার জানতে পারে শিশুটি মক্তবে যায়নি। উৎকণ্ঠায় থাকা পরিবার ১০ দিন পর গত শুক্রবার জানতে পারে, তাদের সন্তান খুন হয়েছে পরিচিতজন আবির মিয়ার হাতে। আয়াত তাঁকে ডাকত চাচ্চু বলে। পুলিশকে আবির জানান, আয়াতকে অপহরণ করেন মুক্তিপণের জন্য। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেন।
গতকাল দুপুরে ওয়াজ মুন্সিবাড়ি এলাকায় সোহেল রানার বাসায় গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। ঘটনার পর থেকে থাকছেন পাশে তাঁর (সোহেল রানা) নানার বাড়িতে। তিনতলা বাড়ির দোতলার একটি কক্ষে পাওয়া যায় আয়াতের মা তামান্নাকে।
কথা হয় আয়াতের ফুফু আলভিনা আক্তারের সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে শোনার পর থেকে নির্বাক হয়ে আছেন ভাবি। খাওয়াদাওয়া অনেকটা ছেড়েই দিয়েছেন।
আয়াতের বাবা সোহেল রানা বাড়ির পাশে একটি মুদির দোকান করেন। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত তিনি। মেয়েকে হারিয়ে অসুস্থতা আরও বেড়েছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে গতকাল ছুটে যান নগরের আকমল আলী রোড–সংলগ্ন সাগরপারে পিবিআইয়ের অভিযানে। যদি মেয়ের লাশের একটি টুকরাও পাওয়া যায়। শেষবারের মতো হাত বুলিয়ে বুকের ধনকে অন্তত দাফন করতে পারবেন।