ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআরএস) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য নীতিমালা ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে। এগুলো সহজ করা প্রয়োজন বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক সভায় এ কথা জানান এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন।
আইসিআরআরএস নীতিমালা অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ৮০-এর বেশি নম্বর পেলে তিনি ‘এক্সিলেন্ট’ শ্রেণিভুক্ত হবেন। ৭০-এর বেশি এবং ৮০-এর কম নম্বর পেলে থাকবেন ‘গুড’ শ্রেণিতে। ৬০-৭০-এর মধ্যে নম্বর হলে ‘মার্জিনাল’ এবং ৬০-এর নিচে নম্বর পেলে ‘আনএকসেপ্টেবল’ শ্রেণিতে থাকবেন। ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতি সহজ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সভাপতির বক্তব্যে জসিম উদ্দিন বলেন, অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সহজ শর্তে বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের জন্য ব্যাংকগুলোতে ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু, এসএমই সার্ভিস সেন্টার, নতুন ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে বিশেষ সুবিধা প্রবর্তনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কোনো ব্যাংকে এসব ইতিবাচক উদ্যোগ বাস্তবায়নে অনীহা পরিলক্ষিত হয়। আমরা আহ্বান করছি যাতে সব ব্যাংকের শাখাসমূহে এসএমইদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালে ঋণ পুনঃতপসিল ও এককালীন এক্সিট দেওয়ার বিশেষ সার্কুলার জারি করলেও ২ শতাংশ টাকা জমা দেওয়ার পরও ব্যাংকের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক গ্রাহকই এর সুবিধা নিতে পারেনি। এতে শিল্পায়নে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারের লক্ষ্য বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও রুগ্নশিল্পগুলোকে এ সুবিধা দিতে ব্যাংকের অনীহার কারণে রুগ্নশিল্পগুলো এক্সিট নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমছে না।
এফবিসিসিআইর সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার থাকার পরও অধিকাংশ ব্যাংক কর্তৃক নন-টেক্সটাইল খাতের রুগ্নশিল্পের দায়-দেনা নিষ্পত্তিতে অনাগ্রহী হওয়ায় বিষয়টি অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। এতে ব্যাংকের বিপুলপরিমাণ অনাদায়ী অর্থ আদায় বিলম্বিত হচ্ছে। যেসব শিল্পের ঋণ হিসাব রাইট অফ করা আছে সেগুলো এমনিতেই মৃত। সেগুলোকে সহজ-শর্তে এক্সিট দেওয়ার সুযোগ দিলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে তিনি জানান।
এবিবির চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার জানান, সব ব্যাংকে ডলারের দাম এক হবে না এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার এক হওয়া উচিত নয়। এটাকে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কিছু নেই। সুদহার মার্কেটের ওপর নির্ভর করে। ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে আলী রেজা বলেন, আমরা দেশের আইন মেনেই চলি। এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা এনপিএল বা খেলাপি ঋণ। এটা না থাকলে কোনো সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল না। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নিয়ে কি করা যায় সে কথা ভাবতে হবে।