গত অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ব্যাংকের আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বেশি সুদ পাওয়া মানুষ এদিকে ঝুঁকছিল। মূলত, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এত বেশি আসছিল যে, তা সরকারের জন্য বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্র কিনতে বেশকিছু কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। যেমন, কর শনাক্তকরণ নম্বরও (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা। এরই মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকে। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে থাকে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে উলটো ঘটনা ঘটেছে।
মহামারি ও নানা শর্তের বেড়াজালের পরেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে ১৭ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। অর্থাত্ গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় বিক্রি ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা, ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম হওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি ‘নিরাপদ’ মনে করছেন। তাই বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করেও সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মিলে মোট ১৭ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে মূল পরিশোধ হয়েছে ১০ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। মূল অর্থ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থ নিট বিক্রি হিসেবে গণ্য হয়। সেই হিসেবে আলোচিত সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ছিল ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে।
এদিকে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। যা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গেল অর্থবছরের সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছিল ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একক মাস হিসাবে আগস্টে মোট ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মূল অর্থ পরিশোধ হয়েছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর আগের মাস জুলাইয়ে মোট ৮ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। ঐ সময় নিট বিক্রির পরিমাণ তিন হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।