বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলে দিন দিন কর্মী কমে যাচ্ছে, কিন্তু নেতার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের এতো নেতা দরকার নেই। আমাদের আজকে সাচ্চা কর্মী দরকার। মঞ্চের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে, কত নেতা! নেতার অভাব নেই। বিলবোর্ডে সুন্দর সুন্দর ছবি দেখাবেন, লোকে চেনেও না! উনি বিলবোর্ডে উজ্জ্বল। এসবও দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা মুজিববর্ষে আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমি দখলদার মাদককারবারিকে জায়গা দেব না। নেতা হতে হলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মনে রাখতে হবে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে ভোগের লিপ্সা ত্যাগ করে, আমাদের সত্যিকারের মুজিব সৈনিক হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া আদর্শের পতাকা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগে সুবিধাবাদীদের দরকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কিন্তু বাংলার বাতাসে আবারও চক্রান্তের গন্ধ। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে অশুভ শক্তি। নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি চক্রান্ত করে সরকার হটানোর ষড়যন্ত্র করছে। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশে আর যেন কোনো দিন সাম্প্রদায়িক শক্তি, অন্ধকারের শক্তি ক্ষমতায় না আসতে পারে সে জন্য আওয়ামী লীগকে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, পকেট কমিটি করে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করবেন না। পকেটের লোকদের নিয়ে কমিটি করলে আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদীদের হাতে চলে যাবে। মশারির ভেতর মশারি টাঙাবেন না। ঘরের ভিতর ঘর বানাবেন না। আমাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে হবে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন ও এসএম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু ও বেগম আখতার জাহান।
উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা প্রফেসর আব্দুল খালেক ও প্রফেসর সাইদুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মুনসুর রহমান। সম্মেলন পরিচালনা করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
লিটন-ডাবলুর প্রত্যাবর্তন
এদিকে দ্বিতীয় বারের মত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন যথাক্রমে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মো. ডাবলু সরকার। অর্থাৎ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক পদে লিটন-ডাবলুতেই ভরসা রেখেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
রবিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় বিপুল করতালিতে তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে ওবায়দুল কাদের আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন তিনি। এর আগে তিনি নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলরসহ নেতাকর্মীদের অনুমতি নেন। বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি
অন্যদিকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতায় বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে হবে। অন্যথায় রাজশাহী জেলা কমিটি ভেঙে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাকে সভাপতি, সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাবলুকে যুগ্ম-সম্পাদক গোষণার তিন মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন।
লিটন-ডাবলুকে জেলা আওয়ামী লীগের অভিনন্দন
মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকার আবারও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুননির্বাচিত হওয়ায় তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জনিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা। রবিবার এক বার্তায় তাঁরা আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন মহানগর কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাজশাহী গড়তে কাজ করবেন।