উত্তাল ইন্দোনেশিয়া: বৈষম্য ও অসন্তোষের সূত্রপাত – Daily Bhorer Potrika

উত্তাল ইন্দোনেশিয়া: বৈষম্য ও অসন্তোষের সূত্রপাত

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

সরকারবিরোধী তীব্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। প্রতিবাদের সূচনায় ছিল জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং এর সাথে যুক্ত সরকারের সংসদ সদস্যদের জন্য মাসিক ভাতা বৃদ্ধি ঘোষণা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশি গাড়ির চাপায় এক ফুড ডেলিভারি কর্মীর মৃত্যু অর্থাৎ আফফান কুর্নিয়াওয়ানের ঘটনাটি বিক্ষোভের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

জানা গেছে, দেশটির ৫৮০ সংসদ সদস্যের জন্য সরকারি অনুমোদিত মাসিক ভাতা ৫০ মিলিয়ন রুপি বা প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার। এটি সামান্য ন্যূনতম মজুরির তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি, যা জীবনযাত্রার ব্যয়ের চাপের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সূত্রে জানা যায়, আগস্টের শেষের দিকে রাজধানী জাকার্তায় এক বিক্ষোভের সময় পুলিশি সাঁজোয়া যান এক ফুড ডেলিভারি কর্মী আফফানকে চাপা দেয়। আফফান তখন একটি ডেলিভারির জন্য যাচ্ছিলেন। ওই সময় তিনি কোনও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, սակայն তার মৃত্যু আজও দেশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আফফানের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকে, যা এক বড় গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

অনেক ঘটনা ঘটে বিক্ষোভ চলাকালে, যেখানে রাজধানী জাকার্তা থেকে শুরু করে সুমাত্রা, সুলাওয়েসি, কালিমান্তান এবং বালির বিভিন্ন রাস্তা মানুষের জনসমাগমে পরিণত হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে একাধিক জায়গায়, বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সরকারি ভবন ও সংসদ সদস্যদের বাসস্থান লুটপাট হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে দেশটির সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

উত্তর সুমাত্রার ল্যাংকাটের এক ফুড ডেলিভারি কর্মী ইমরান বলেন, ‘এই আন্দোলনের মূল কারণ হল বৈষম্য। অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, ও স্বাস্থ্যগত বৈষম্য মানুষকে ক্ষোভে ফেলে দিয়েছে। খুব বেশি দাবি নেই, শুধু এটি চায় যে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান হোক।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের জন্য কোনও জনপ্রতিনিধির চিন্তা নেই। তাদের উদ্দেশ্য শুধু নিজেদের সুবিধা দেখাই। আমরা চাই স্বচ্ছ ও সুবিচারযুক্ত সরকারি ব্যবস্থা।’

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উপদ্রবের ফলে সংসদ সদস্যদের আবাসন ভাতা বাতিল করা হয়েছে, বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়েছে এবং বিদেশে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে আশ্বাস মিললেও, বিশ্লেষকরা মনে করেন পরিস্থিতির পুরো পরিবর্তন আসার জন্য আরও অনেক কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন।

এভাবেই চলমান বিক্ষোভ ও অসন্তোষের মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি আলোচনার কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। গ্রামে-শহরে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ ও দাবির প্রতিফলন হচ্ছে এই প্রতিবাদ আন্দোলন, যা চলমান দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি তুলছে।

সূত্র: আলজাজিরা।