নৌযানশ্রমিকদের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৩৫টি বড় জাহাজে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন পণ্য আটকা পড়েছে।
বড় জাহাজ থেকে খালাস করে নেওয়ার পথে ২ হাজার ৫৯৩টি ছোট জাহাজে (লাইটার জাহাজ) আটকা পড়েছে আরও সাড়ে ৯ লাখ টন পণ্য।
এসব জাহাজে শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য রয়েছে। জাহাজে পণ্য আটকা পড়ায় ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। কর্মবিরতির কারণে নদীপথে আমদানি পণ্য পরিবহন পুরো বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মবিরতির মধ্যে বড় জাহাজ অলস বসে থাকায় ডলারে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে। আর ছোট জাহাজের জন্য টাকায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে ব্যবসায় সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ডলারে কেনা পণ্য নদীপথেই সবচেয়ে বেশি পরিবহন হয়। শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য নদীপথে কারখানায় নেওয়া হয়। নদীপথে পণ্য পরিবহন থমকে যাওয়ার অর্থ সরবরাহ ব্যবস্থায় ছুরিকাঘাত করা। এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে। কারণ, জাহাজ অলস বসে থাকায় যে ক্ষতিপূরণ আসবে, তা দিন শেষে ভোক্তারই পরিশোধ করতে হবে।
ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ গত শনিবার রাত ১২টা এক মিনিট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতি ডেকেছে। ১৫ নভেম্বর এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় পরিষদ। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ লাইটার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. নবী আলম প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতি শুরুর পর থেকে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নৌযান শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে চান না।
নদীপথে পণ্য পরিবহনের মূল কেন্দ্রস্থল চট্টগ্রাম। মূলত আমদানি পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে রেখে লাইটার জাহাজে তা স্থানান্তর করা হয়।
বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, কর্মবিরতির সময় বন্দরের বহির্নোঙরে ৩৫টি জাহাজে খালাসের অপেক্ষায় ছিল সাড়ে সাত লাখ টন পণ্য। প্রতিদিন লাখ টন পণ্য নিয়ে আসছে চার-পাঁচটি করে জাহাজ। এই হিসেবে আটকা পড়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ছে।
বড় জাহাজ ছাড়াও সারা দেশে ছোট জাহাজে আটকা পড়েছে আমদানি পণ্য। বড় জাহাজ থেকে খালাস করে দেশের ৪১টি ঘাটে পণ্য নেওয়া হয়। আজ সোমবার এই ৪১টি ঘাটে ২ হাজার ৫৯৩ জাহাজে আটকা ছিল সাড়ে ৯ লাখ টন পণ্য। লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, লাইটার জাহাজে আটকে পড়া পণ্যের মধ্যে গম, ডাল, চিনি, সয়াবিন বীজ, ক্লিংকার, স্ক্র্যাপ, সার রয়েছে।
কর্মবিরতি কখন শেষ হবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আন্দোলনরত শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।