এবার রাজধানীর সাভারে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ্য রাস্তায় মাদ্রসা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ব্যানারে ব্লগারদের ফাঁসির দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ -এর নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় একালায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলমান রাজনৈতিক সংকট ও ক্রমাগত ব্লগারদের গুপ্ত পদ্ধতিতে খুন করা ও হুমকি দেয়ার এমন অবস্থাতেই এই ঘটনা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ -এর উক্ত বিক্ষোভ মিছিলটি তারা শুরু করেন সাভারে দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার আঙ্গন থেকে এবং শহরের ব্যস্ত ও প্রাথমিক সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার আঙ্গনে এসে শেষ হয়। উক্ত বিক্ষোভ মিছিলে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ নেতাকর্মীরা মুক্তমনা ব্লগারদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় তাদের ফাঁসী দাবী করেছে।
উক্ত ব্যানারে লিখা ছিলঃ
“মহান আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে অবমাননাকারী নাস্তিক, কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ, মুরতাদ, কাফির ব্লগারদের প্রকাশ্যে ফাঁসী চাই। এদের ধরিয়ে দিন, এরা নবী ও রাসুলের অবমাননাকারী, এদের নাগরিকত্ব বাতিল কর।
এরা সবাই ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু, এদের সকলকেই প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।
প্রচারেঃ হেফাজত ইসলামি বাংলাদেশ ও বাংলার সচেতন মুসলিম জনতা”
উক্ত ব্যানারে ছবি সম্বলিত ব্লগাররা হলেন –
আদনান সাকিব, কমল চন্দ্র দাস, মুহাইমিনুল বিশ্বাস, কেএম মাহফুজুর রহমান, এমডি উমায়েদ হোসাইন, ইমরুল কায়েস, সুজন চন্দ্র দেব, আমিনুল হক, চিন্ময় দেবনাথ, রাজীব আহমেদ চৌধুরী, অনুপ চক্রবর্তী, বর্ণালী চক্রবর্তী, জোবায়ের হোসাইন, আনিকা হক মল্লিক, এমডি রেজাউল ইসলাম, এমডি জিল্লুর রহমান, এমডি মাহাদী হাসান, রুমানা আফরোজ রাখী, অরুনাংশু চক্রবর্তী, রাজীব কুমার সাহা, প্রশান্ত বাড়ই, তানজিলা তাজ রিসা, খায়রুল্লা খন্দকার।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগার ও মুক্তমনা লেখকদের হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দেশের সকল ব্লগার, লেখক তথা মুক্তমনা লেখকদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদের অনেকেই এখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন আর কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ব্লগার এই প্রতিবেদকে বলেন, “আমার ধারনা এই সকল হত্যাকাণ্ডের সাথে সরকারের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে এবং তাদের মদত না থাকলে খুনিরা এইভাবে নির্বিঘ্নে খুন করে পালাতে পারেনা।”
উল্লেখ্য যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সালে প্রখ্যাত মুক্তমনা লেখক রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা মিরপুরের রূপ নগরে তাঁর নিজ বাসার সামনে খুন হন। এছাড়াও ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রখ্যাত প্রথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে বাংলা একাডেমীর বই মেলার সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, যার বিচার আজও এই বাংলাদেশে হয়নি। বাংলাদেশেই ৯০ দশকের শুরুর দিকে প্রখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাস্রিনের মাথার মূল্য হাঁকেন সিলেটের ফুলতলীর পীর। তৎকালীন সময় তিনি ঘোষণা দেন যে তসলিমার মাথা কেউ কেটে এনে দিতে পারলে তিনি সেই ব্যক্তিকে ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দিবেন। খুন করবার প্ররোচনা দেবার পরও বাংলাদেশে ফুলতলীর বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকার কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগে ১৯৭৩ সালে প্রখ্যাত লেখক দাউদ হায়দারকে সামান্য একটি কবিতা লেখার দায়ে জার্মানিতে নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি আজও বসবাস করেন, দেশে ফিরে আসতে পারেন নি। একইভাবে তসলিমা নাসরিনও আজ পর্যন্ত তাঁর নিজের দেশে ফিরে আস্তে পারেননি।
প্রকাশ্য এমন মিছিল ও সমাবেশ এলাকাবাসীর মনে শঙ্কা ও উদ্বেগের তৈরি করেছে। তাদের অনেকেই এইসব পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চান বলে আমাদের এই প্রতিবেদককে জানান। উল্লেখ্য যে এইসব খুনের দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম নামে একটি সংগঠন অজানা স্থান থেকে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে যারা আল কায়েদার অনুসারী বলেও নিজেদের প্রচার করে যাচ্ছে। এই সমাবেশের ব্যাপারে সাভার থানার ডিউটি অফিসার মিজান রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন ব্যস্ত আছেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।