বহু প্রতীক্ষা আর আলোচনার পর অবশেষে আজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসছে স্বয়ংক্রিয় হিসাবযন্ত্র ইএফডি (ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস)। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্রের কার্যক্রম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব প্রতিষ্ঠানে সফল হলে কিংবা কোনো ত্রুটি দেখা দিলে সমাধান করে পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী নির্ধারিত ১ লাখ প্রতিষ্ঠানে এ যন্ত্র বসবে। এরপর ধীরে ধীরে তা আরো বাড়বে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিক্রির স্বচ্ছতা আনতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের (ইসিআর) বদলে ইএফডি মেশিন বসানোর বিষয়ে গত তিন বছর ধরেই আলোচনা চলছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে এ মেশিন স্থাপনের ঘাষণা দিয়েছিল। কিন্তু প্রস্তুতিতেই পার হয়ে গেছে দুই বছর। কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই মেশিন সরবরাহ করা হবে, কী প্রক্রিয়ায় কিংবা সরবরাহ-পরবর্তী সমস্যা সমাধানের উপায় কী হবে—এসব বিষয়ে মতপার্থক্য ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়। এর মধ্যে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হওয়া কিংবা না হওয়ার ইস্যুও ছিল।
অবশ্য দেরিতে হলেও সরকারের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ব্যবসায়ী নেতাদের একটি অংশ। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ইফডি মেশিন স্থাপন ইতিবাচক এবং এতে হয়রানিও কমবে। এর ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তা-ও নিশ্চিত করা যাবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যে পালটাপালটি অভিযোগ রয়েছে, তা-ও কমে আসবে। তবে এই ব্যবস্থা চালুর পর তা যাতে সফল হয়, সেই চেষ্টা করতে হবে।
এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শুরুতে এসব ইএফডি মেশিন ক্রয়মূল্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহের কথা থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তা ফ্রি দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম সফল করার জন্য ইএফডি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিসহ (ইএফডিএমএস) পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এনবিআর তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করবে।
সরকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্বচ্ছতা আনতে ২০০৮ সালে উদ্যোগ নেয়। তখন ১১ ধরনের ব্যবসায়ে ইসিআর ও পয়েন্ট অব সেল্স (পিওএস) মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও ঐ উদ্যোগে তেমন সাফল্য মেলেনি। এরপর বিস্তৃত পরিসরে (২৫ ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান) ইএফডি মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইএফডির বিশেষত্ব হলো, বিক্রির তথ্য ইএফডিতে সংরক্ষণ করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরে রক্ষিত কেন্দ্রীয় সার্ভারে (ইএফডিএমএস) সংযুক্ত হবে। ফলে বিক্রীত পণ্যের ভ্যাট এনবিআর জানতে পারবে।
অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো বিক্রয়ের তথ্য যদি ইএফডিতে না দিয়ে নগদে লেনদেন করা হয়, সে ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে ভ্যাট ফাঁকি ধরা সম্ভব হবে না। আর প্রতিটি লেনদেন পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা বাস্তবে সম্ভবও নয়।