দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারি নির্বাহী আদেশ বা প্যারোলে মুক্ত করাতে দল ও পরিবার একমত হতে পারছে না। পরিবার চাইছে, তারা যে কোনো উপায়ে বেগম জিয়াকে মুক্ত করিয়ে বিদেশে নিয়ে চিকিত্সা করাবে। অপর পক্ষের দলের নীতিনির্ধারকেরা চান আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে জামিন অথবা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে কারাগার থেকে বের করতে। এ নিয়ে মতানৈক্য চলছে।
সেলিমা ইসলাম বোনের মুক্তির বিষয়ে বলেন, ‘বিদেশে উন্নত চিকিত্সার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হোক। তার শরীরের যে ভয়াবহ অবস্থা, তাতে যে কোনো সময় একটি অঘটন ঘটে যেতে পারে। তাই প্যারোলে হলেও তার মুক্তি চাই। তাকে আগে বাঁচাতে হবে। আমরা তাকে বিদেশে নিয়ে সুচিকিত্সা করাতে চাই।’
এদিকে মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কারাবন্দি অবস্থায় চিকিত্সাধীন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন সম্পূর্ণ তার পরিবারের বিষয়। এ বিষয়ে তার পরিবারই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা তো দলের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত প্যারোল নিয়ে কথা বলিনি। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার শরীরের যে অবস্থা, তাতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে আটকে রেখেছে। আমরা এর জন্য আন্দোলন করছি, গত দুই বছর ধরে আন্দোলনের মধ্যেই আছি। আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করব আমরা।’
এদিকে উন্নত চিকিত্সার জন্য লন্ডনে যেতে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়া জামিনের আবেদন করেছেন। তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে এই জামিনের আবেদন করা হয়েছে।
জামিন আবেদনে পাঁচটি যুক্তি দেখানো হয়েছে। এগুলো হলো—খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার উন্নত চিকিত্সা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিত্সা হচ্ছে না, তাই জামিন পেলে তিনি উন্নত চিকিত্সার জন্য লন্ডনে যাবেন।
তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের একটাই কারণ, সেটা হলো মানবিক। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে বাঁচানো দরকার। আর দেশের আদালত তো মানুষের জন্য। আমরা আবেদনে লিখেছি, তাকে জামিন দিলে চিকিত্সার জন্য দেশের বাইরে পাঠাব।’ দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, তারা বেগম জিয়ার জামিন ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আইনি বিবেচনায় দুদকের কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই, সে যে-ই হোক। দুদক এর আগেও কাউকে ছাড় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। আমরা জামিন আবেদনটি পেয়ে পর্যালোচনা করেছি। আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি।’
এদিকে একটি সূত্র জানায়, পরিবারের পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার প্যারোলের জন্য কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে। তারা যে কোনো উপায়ে কারামুক্ত করে বিদেশে নেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেগম জিয়া যদি তার দোষ স্বীকার করে আবেদন করেন, তবে প্যারোলের বিবেচনা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্যারোল আবেদন করতে হবে। যৌক্তিকতা দেখে সরকারি বিধিবিধান অনুসারে বিবেচনা করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দোষ স্বীকার করেই খালেদা জিয়াকে প্যারোলের আবেদন করতে হবে। তাহলে সরকার বিবেচনা করবে।
বিএনপি কেন প্যারোল চায় না, সে প্রসঙ্গে দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে কী মনোভাব আমরা জানি না। প্যারোল মানে দায় স্বীকার এবং শর্ত মেনে নেওয়া, যা তার আপসহীন ভাবমূর্তির বিরোধী। সরকারের মনোভাব জানা ছাড়া জামিন কিংবা প্যারোলে মুক্তির কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। বেগম জিয়া সরাসরি প্যারোলে মুক্তি চেয়ে আবেদন করবেন কি না, তা আমরা জানি না। আবার সরকারও তাকে প্যারোলের বাইরে ছাড়তে নারাজ। সেক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি মিটমাট করতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি তৃতীয় পক্ষ খুব জরুরি। এই পক্ষকে আশ্বস্ত করতে হবে, ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ দরকার। সেটা যদি হয়, বিএনপির কোনো আপত্তি নেই।’